বুকে হাত দিয়ে বলুন, ম্যাডামের মুক্তি চান?’

বুকে হাত দিয়ে বলুন তো আপনারা ম্যাডামের মুক্তি চান?’ গতরাতে বিএনপি সিনিয়র নেতাদের বৈঠকে এই প্রশ্ন উত্থাপন করলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বললেন, আমরা সবাই নাটক করছি। বেগম জিয়া জেলে থাকায় আমরা কেউ কি অসুখী? আমাদের কোনো কষ্ট হচ্ছে? আপনাদের ব্যস্ততা, ব্যবসা-বাণিজ্য কিছুই কি বন্ধ হয়েছে?’ গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়ার আগে আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখুন।’

গতরাতে বিএনপির সিনিয়র নেতারা বৈঠকে বসেছিলেন। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ৮ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এরা হলেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. খন্দকার মোশররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং নজরুল ইসলাম খান। স্থায়ী কমিটির বাইরে বৈঠকে আব্দুল আউয়াল মিন্টু, মেজর (অব.) হাফিজসহ আরও কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে টেলিফোনের মাধ্যমে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়াও যুক্ত হন।

দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে আন্দোলন, বেগম জিয়ার মুক্তি এবং স্থানীয় সিটি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু অন্যান্য বৈঠকের সঙ্গে এই বৈঠকের মৌলিক পার্থক্য হলো, এই বৈঠক ছিল আত্ম-সমালোচনায় মুখর। বৈঠকের সভাপতি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলোচনার শুরুতেই আত্ম-সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন এতদিন ধরে জেলে, কিন্তু আমরা একটি আন্দোলন গড়ে তুলতে পারিনি। আইনগত দিক থেকে ম্যাডামের মুক্তির সম্ভাবনা নেই। তাই আমাদের আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই।’ এসময় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘প্রায় তিনমাস পর আমরা বুঝলাম যে, আইনি লড়াইয়ে ম্যাডামের মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই? এই উপলব্ধি নিয়ে আমাদের রাজনীতি ছেড়ে দেওয়া উচিৎ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই পাকা অভিনেতা। আমি কারও নাম বলতে চাইনা, কিন্তু ম্যাডাম জেলে যাওয়ায় অনেকেই খুশি হয়েছেন। অনেকেই নেতা হয়েছেন।’ এসময় মির্জা ফখরুল এর প্রতিবাদ করলে বৈঠকে বচসা শুরু হয়। এ সময় লন্ডন পলাতক নেতা সবাইকে শান্ত হতে বলেন। এরপর তিনি দীর্ঘ ১৫ মিনিট বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি ত্যাগ স্বীকারের জন্য প্রস্তুত হতে বলেন।

তারেক বলেন, এখন আমাদের মতবিরোধের সময় নয়। ঐক্যবদ্ধ হবার সময়। তারেকের বক্তব্যের পর আবার গয়েশ্বর রায় বক্তব্য রাখেন। তিনি তারেক জিয়ার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, কিন্তু আপনি বিশ্বাসঘাতক, পলায়নপর এবং কাপুরুষদের নিয়ে বেশিদূর যেতে পারবেন না।’ গয়েশ্বর বলেন, আন্দোলন শুরু হলে দেখবেন দৌড়ে অনেকে পালাবে।’ ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, কাউকে আগে থেকে বিশ্বাসঘাতক বলা উচিৎ না। আন্দোলনের মাঠ থেকে বিভিন্ন সময় অনেকে ছিটকে গেছে, তাতে তাদেরই ক্ষতি হয়েছে। তাই এসব চিন্তা করে লাভ নেই। আমাদের কঠোর আন্দোলনে যেতে হবে।’ তিনিও আত্ম-সমালোচনা করে বলেন, আমরা ম্যাডামের মুক্তির জন্য যথাযথ ভূমিকা নিতে পারিনি। এখন নতুন করে আন্দোলন শুরু করতে হবে।

নেতারা সবাই বলেন, তারেক জিয়াই তাঁদের নেতা, তিনি যে নির্দেশ দেবেন তাই তাঁরা পালন করবেন। তারেক জিয়া ঈদের পর থেকে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি মহাসচিব সহ কয়েকজনকে লন্ডনে ডেকে পাঠিয়েছেন।